গলনালি, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিভ, তালু, দাঁত, নাক প্রভৃতি প্রত্যঙ্গ দিয়ে মানুষ নানা রকম ধ্বনি তৈরি করে। এক বা একাধিক ধ্বনি দিয়ে তৈরি হয় শব্দ। শব্দের গুচ্ছ দিয়ে বাক্য গঠিত হয়। বাক্য দিয়ে মানুষ মনের ভাব আদান-প্রদান করে। মনের ভাব প্রকাশক এসব বাক্যের সমষ্টিকে বলে ভাষা।
ভাষা একদিকে মুখে বলার এবং অন্যদিকে কানে শোনার বিষয়। সভ্যতার অগ্রগতিতে মুখের ভাষা ক্রমে লেখার ও ছাপার, সেইসঙ্গে চোখ দিয়ে পড়ার বিষয়েও পরিণত হয়েছে। এছাড়া দৃষ্টি-শক্তিহীনদের জন্য ভাষাকে উঁচুনিচু করে তৈরি করার ও হাত দিয়ে অনুভব করার ব্রেইল পদ্ধতি, আবার বাক্-শক্তিহীনদের বোঝানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ইশারা ভাষা মানুষ তৈরি করেছে।
জনগোষ্ঠী ভেদে ভাষার বৈশিষ্ট্য আলাদা হয়, ভাষাও আলাদা হয়ে ওঠে। এভাবে পৃথিবীতে কয়েক হাজার ভাষার জন্ম হয়েছে। পৃথিবীর প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনা, ইংরেজি, হিন্দি, হিস্পানি, আরবি, বাংলা, পর্তুগিজ, রুশ, জাপানি, জার্মান, কোরিয়ান, ফরাসি, তামিল, তুর্কি, উর্দু, ফারসি প্রভৃতি।
বাঙালি জনগোষ্ঠী যে ভাষা দিয়ে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে তার নাম বাংলা ভাষা। বাংলা ভাষায় কথা বলে প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষ। এর মধ্যে বাংলাদেশে ষোলো কোটি এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দশ কোটি মানুষের বাস। এছাড়া ত্রিপুরা, আসাম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশাসহ ভারতের অন্যান্য প্রদেশে প্রায় তিন কোটি এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আরো প্রায় এক কোটি বাংলাভাষী মানুষ রয়েছে। মাতৃভাষী মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলা পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা।
পৃথিবীর ভাষাগুলোকে ইন্দো-ইউরোপীয়, চীনা-তিব্বতীয়, আফ্রিকীয়, সেমীয়-হেমীয়, দ্রাবিড়ীয়, অস্ট্রো-এশীয় প্রভৃতি ভাষা-পরিবারে ভাগ করা হয়ে থাকে। ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি, হিস্পানি, রুশ, পর্তুগিজ, ফারসি, হিন্দি, উর্দু, নেপালি, সিংহলি প্রভৃতি ভাষার মতো বাংলা ভাষাও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের সদস্য। বাংলা ভাষার নিকটতম আত্মীয় অহমিয়া ও ওড়িয়া। ধ্রুপদি ভাষা সংস্কৃত এবং পালির সঙ্গে বাংলা ভাষার রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের আদি ভাষা বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় পরিণত হয়েছে। এই বিবর্তনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্তর বাংলা ভাষাকে অতিক্রম করতে হয়েছে, সেগুলো হলো: ইন্দো-ইউরোপীয় → ইন্দো-ইরানীয় → ভারতীয় আর্য → প্রাকৃত → বাংলা। আনুমানিক এক হাজার বছর আগে পূর্ব ভারতীয় প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে। বাংলা ভাষার লিখিত রূপের প্রাচীনতম নিদর্শন 'চর্যাপদ'।
বাংলা ভাষার রয়েছে কালগত ও স্থানগত স্বাতন্ত্র্য। এক হাজার বছর আগেকার ভাষা, পাঁচশো বছর আগেকার ভাষা, এমনকি উনিশ শতকে প্রচলিত ভাষার সঙ্গে বর্তমান কালের ভাষা আলাদা। আবার ভৌগোলিক এলাকাভেদে বাংলা ভাষার নানা বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। ভাষার এই আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে বলা হয় উপভাষা।
বাংলা ভাষার নিজস্ব লিপি রয়েছে। এই লিপির নাম বাংলা লিপি। বাংলা লিপিতে মূল বর্ণের সংখ্যা ৫০টি - স্বরবর্ণ ১১টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি।
প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে উপমহাদেশে ব্রাহ্মী লিপির জন্ম হয়। ব্রাহ্মী লিপির পূর্ব-ভারতীয় শাখা দশম শতক নাগাদ কুটিল লিপি নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলা লিপি এই কুটিল লিপির বিবর্তিত রূপ। অহমিয়া, বোড়ো, মণিপুরি প্রভৃতি ভাষাও বাংলা লিপিতে লেখা হয়। সংস্কৃত এবং মৈথিলি ভাষা এক সময়ে এই লিপিতে লেখা হতো।
বাংলাদেশের জীবনযাত্রার প্রায় সবক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারের বিষয়টি সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক। এছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা প্রদেশের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা বাংলা।
চোখ
কান
নাক
জিভ
১. বর্ণের সঙ্গে কোন ইন্দ্রিয়ের সরাসরি সম্পর্ক আছে? ক. চোখ খ. কান গ. নাক ঘ. জিভ
২. ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার করে- ক. শ্রবণ-শক্তিহীনরা খ. দৃষ্টি-শক্তিহীনরা গ. মানসিক-শক্তিহীনরা ঘ. শারীরিক-শক্তিহীনরা
৩. বাংলা ভাষায় কথা বলে প্রায়- ক. ১৫ কোটি লোক খ. ২০ কোটি লোক গ. ২৫ কোটি লোক ঘ. ৩০ কোটি লোক
৪. মাতৃভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর কততম ভাষা? ক. ৪র্থ খ. ৫ম গ. ৬ষ্ঠ ঘ. ৭ম
৫. নিচের কোনটি ভাষা-পরিবারের নাম নয়? ক. ইন্দো-ইউরোপীয় খ. আফ্রিকীয় গ. দ্রাবিড়ীয় ঘ. ইন্দো-ইরানীয়
৬. ধ্রুপদি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত- ক. সংস্কৃত ও পালি খ. অহমিয়া ও ওড়িয়া গ. নেপালি ও সিংহলি ঘ. হিন্দি ও উর্দু
৭. নিচের কোনটি থেকে বাংলা ভাষার জন্ম? ক. কেন্তুম খ. সংস্কৃত গ. পূর্ব ভারতীয় প্রাকৃত ঘ. দ্রাবিড়ীয়
৮. বাংলা ভাষার প্রাচীন নমুনা পাওয়া যায় - ক. মহাভারতে খ. চর্যাপদে গ. বৈষ্ণব পদাবলিতে ঘ. মঙ্গলকাব্যে
৯. বাংলা ভাষার নিজস্ব লিপি কোনটি? ক. ব্রাহ্মী খ. মণিপুরি গ. বাংলা ঘ. কুটিল
১০. ভারতের কোন প্রদেশের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা বাংলা? ক. কেরালা খ. ওড়িশা গ. ত্রিপুরা ঘ. হরিয়ানা
আরও দেখুন...